শনিবার, ৭ জানুয়ারী, ২০১২

বিজ্ঞানী যখন গিনিপিগ


                                      মোহাম্মাদ সাদমান সাকিব
      
    এ পৃথিবীর আদিকাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত যত আবিষ্কার হয়েছে, সেসব আবিষ্কারের গল্পে ২ টি চরিত্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ।একজন হলেন  বিজ্ঞানী, যিনি আবিষ্কার করেন আরেকজন হচ্ছে  গিনিপিগ, যার উপর পরীক্ষা করা হয়। এই ২ টিরই অবদান বিজ্ঞান কে অনেক দূরে নিয়ে গেছে। মানুষকে করেছে আলোকিত। কিন্তু কিছু কিছু বিজ্ঞানী ছিলেন যারা অসীম দুঃসাহসিকতার সাথে নিজেরাই তাদের আবিষ্কারের গিনিপিগ হতেন। আজকের গল্পটা শুধুই তাদের।


  •    জোনাস সাল্ক

       ১৯৫২ সালের মাঝামাঝি,পোলিও তখন মহামারী আকার ধারণ করেছে। উন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ সর্বত্রই পোলিওর অবাধ বিচরণ না আর বসে থাকলেন না জোনাস সাল্ক। বানরের উপর পরীক্ষা চালানোর পর তিনি কাউকে না পেয়ে নিজের শরীরে টিকা নিলেন,বাদ গেলনা স্ত্রী সন্তানও। প্রথম কার্যকরী পোলিও টিকা আবিষ্কারের স্বীকৃতি মিলেছিল তার। কিন্তু ততদিনে মুখে খাবার টিকা আবিষ্কৃত হওয়ায় এটি বেশি দিন প্রয়োজন হয় নি।


  •   কার্ল শিল 

       বিশ্ববিখ্যাত লেখক আইজাক আসিমভ তাকে যথার্থ নাম দিয়েছিলেন ‘দুর্ভাগা বিজ্ঞানী’। এ রসায়নবিদ অনেক কিছু আবিষ্কার করেছিলেন। কিন্তু ভাগ্য তার সাথে প্রতারণা করেছিলো ফলে তার আবিষ্কার স্বীকৃতি লে যায় অন্যের কাছে তিনি সর্বপ্রথম অক্সিজেন আবিষ্কার করেছিলেন। কিন্তু প্রকাশ করতে দেরী হওয়ায় তার কৃতিত্ব চলে যায় জোসেফ প্রিস্তলীর কাছে। সারা জীবন কেটেছে বিষাক্ত রাসায়নিকের সংস্পর্শে । তিনি মারা যান মাত্র ৪৩ বছর বয়সে। মারা যাওয়ার কারণ হিসেবে দেখা যায় নিজের উপর অতিরিক্ত পরীক্ষা চালানোই ছিলো তার মৃত্যুর কারণ। মৃত্যুর মাত্র ২ দিন আগে এক বিধবাকে বিয়ে করেছিলেন। গবেষণার উপাদানগুলো তার কাছে রেখে যাওয়াই ছিলো এর উদ্দেশ্য।

  •    এলবার্ট হফম্যান


      এল এস ডি(LSD), একটি ভয়ঙ্কর মাদকের নাম।এর ভয়াবহ প্রভাব মানুষের স্বাভাবিক জীবন বাধাগ্রস্ত করে। কিন্তু এর অন্য একটি উপকারী দিক রয়েছে। ব্যাথানাশক এবং মস্তিস্ক চিন্তাশুন্য করার জন্য এটি বহুল ব্যাবহৃত। সুইজারল্যান্ডের বিজ্ঞানী এলবার্ট হফমান এর সাহসিকতার জন্য তিনি এর ক্ষমতা অনুধাবন করতে সক্ষম হন। প্রথমে অসাবধানতায় সামান্য ড্রাগ গ্রহণ করে ফেলেছিলেন। সূক্ষ্ম পরিবর্তন টের পেয়ে পরে বেশি ডোস নিয়ে নিলেন। তার জন্যই সারা বিশ্ব জানল এল এস ডি’র জাদুকরি ক্ষমতার কথা।



  •             কেভিন ওয়ারউইক

      বর্তমান সর্বত্রই রোবটের জয় জয়কার। অনেক দুঃসাধ্য কাজও রোবটের দ্বারা সম্ভব হচ্ছে। ইংল্যান্ডের বিজ্ঞানী কেভিন ছিলেন ওয়ারউইক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবট বিশেষজ্ঞ। আপনি কি পারবেন নিজের শরীরে তড়িৎদার বসাতে? আমার সন্দেহ যদি ভুল না হয় তাহলে আপনি এখন ডানে বামে মাথা নাড়ছেন। কিন্তু কেভিন দূরে বসা রোবটের মানবিক আবেদনে সারা দেওয়ার সম্ভাবনা যাচাই করতে নিজের শরীরে তড়িৎদার বসান। যন্ত্র ব্যবহারে মানুষের শারীরিক দক্ষতা বৃদ্ধি পায় কিনা তা দেখাই ছিলো তার উদ্দেশ্য।


  •           ওয়ার্নার ফ্রসম্যান 


       আপনাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় 
কতটুকু সাহস থাকলে আপনি নিজেকে সিংহ হৃদয় এর অধিকারী বলবেন? জার্মান বিজ্ঞানী ওয়ার্নার ফ্রসম্যান বলেছিলেন হৃদরোগে ক্যাথেটার( ওষুধ বহনকারী নল) আবিষ্কারের কথা। যা দারুণ সমাধান হতে পারে। সমস্যা হল এ পরীক্ষায় মুহূর্তের ভুল মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। তাই সত্যতা প্রমাণে নিজের শিরায় ক্যাথেটার ঢুকিয়ে দিলেন তারপর অপেক্ষা করলেন হৃদযন্ত্রে পৌঁছানো পর্যন্ত; তারপর একা একা নিজেই দাড়ালেন এক্সরে মেশিনের সামনে। এই সাহসিকতার জন্য তিনি পেলেন নোবেল পুরস্কারের সম্মান


  •     ড্যানিয়েল ক্যারিওন

      তারুণ্য মানেই উচ্ছলতা, সজীবতা। মেডিকেল কলেজ পড়ুয়া উচ্ছল তরুণ ছিলেন পেরুর ড্যানিয়েল ক্যারিওন। তার দেশের অনেকেই তখন অজানা বিশেষ জ্বরে আক্রান্ত। অজানা এই জ্বরের সাথে পরিচিত এক রোগের সঙ্গে মিল আছে বলে মনে হল তার। কিন্তু প্রমান তো চাই। ১৪ বছরে এক আক্রান্তের রক্ত গ্রহণ করে বিষক্রিয়ায় মরে গেলেন তিনি। তার মৃত্যুতে টনক নরল সবার। রোগের নাম রাখা হল কারিওন জর আর তার সঙ্গে জাতীয় বীরের মর্যাদা পেলেন ক্যারিওন। ৫ই অক্টোবর তার মৃত্যুর দিনটি আজ পেরুর জাতীয় চিকিৎসা দিবস।
                                  
                                                                                                                                                                                                                                           (ইন্টারনেট অবলম্বনে)

৪টি মন্তব্য: