বুধবার, ৪ জানুয়ারী, ২০১২

ক্যান্সার চিকিৎসায় অভূতপূর্ব অগ্রগতি

                                                           নাফিস-উল-আলম


জরা ও মৃত্যুর বিরুদ্ধে মানুষের সংগ্রাম আজীবনের। কিন্তু এই লড়াইয়ে আমরা কতটুকু বিজয়ী হতে পারি? বিশেষ করে ক্যান্সার বা এইডস এর মত প্রাণ সংঘাতি রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কারে বিজ্ঞানীরা এখনো ব্যর্থ। ­­­কিন্তু বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষের যুগে এইসব রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কারে প্রতিদিনই নতুন অধ্যায় রচিত হচ্ছে। তেমনি ক্যান্সার চিকিৎসায়ে এক ধাপ এগুলো চিকিৎসাবিজ্ঞান।­­­­­

    সম্প্রতি গবেষকরা 
ক্যান্সার কোষের অন্যতম কারণ হিসেবে পরিচিত মাইক নামক জিন ধ্বংসের উপায় খুঁজে পেয়েছেন।

এই গবেষণা মাইক ঘটিত ক্যান্সার চিকিৎসায় প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করল।

  
    আসলে মাইক নামক জেনেটিক অ্যাক্সেলেরেটর বরধিশনু কোষগুলোর জেনেটিক 
উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এবং প্রোটিনে এদের অবস্থানও বের করে। কিন্তু কোনও কারণে তা যদি পরিবর্তিত বা মিউটেটেড হয় তবে মাইক অধিক ক্রিয়াশীল হয়, ফলে দেহ কোষগুলো অনিয়মিত বিভাজিত হয় যা টিউমার এবং ক্যান্সার কোষ তৈরি করে। এই ক্যান্সার কোষগুলো মাইকের কার্যকারিতার উপর নির্ভর করে। তাই গবেষকরা মাইক নামক জিনটি ধ্বংসের জন্য বহু পরীক্ষা চালিয়েছেন যদিও তা ফলপ্রসূ হয় নি। তাই হার্ভার্ড মেডিকেল এর জেনেটিকস বিভাগের অধ্যাপক Stephen Elledge এবং তার সহযোগী বেইলর কলেজের সহকারী অধ্যাপক Thomas Westbrook ভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করেন। তারা মাইক জিনটিকে সরাসরি আক্রমণ না করে এর সহযোগী জিনগুলোকে আক্রমণ করে একে নিষ্ক্রিয় করতে সক্ষম হয়েছেন। এই জিনগুলো খুঁজে বের করার জন্য বিজ্ঞানীরা RNA অণুর সাহায্য নিয়েছেন যেগুলো নির্দিষ্ট কিছু জিনের কাজে বাধা প্রদান করে। তারা এই RNA স্তনের এপিথেলিয়াল কোষে ব্যবহার করেছেন। আর এই কোষগুলোতেই মাইক এর মিউটেটেড বা অধিক কার্যক্ষম হওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। এক্ষেত্রে প্রতিটি কোষে শুধুমাত্র একটি প্রচ্ছন্ন জিন ছিল। যদি মাইকের কাজ শুরু হওয়া মাত্র কোষটি মারা যায়, তবে প্রচ্ছন্ন জিনটি অবশ্যই ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য দায়ী। এভাবে তারা ৭৫০০০ RNA অণু নিয়ে পরীক্ষা করেছেন এবং অবশেষে ৪০৩টি উপযুক্ত অণু পেলেন যা ক্যান্সারের জন্য দায়ী জিনগুলোর কর্মক্ষমতা রোধ করে। Westbrook এর মতে,"মাইক নির্ভর ক্যান্সার এমন কতগুলো এনজাইমের উপর নির্ভরশীল যেগুলো সুস্থ কোষে থাকে না। এই এনজাইমগুলোকে টার্গেট করেই ক্যান্সার চিকিৎসা করতে হবে।Elledge এর মতে, এই জিনগুলো অনকজিন না হলেও এগুলো ওইসব প্রোটিনের কোডিং করে যা মাইকের ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য দায়ী। তাই মাইককে আক্রমণ না করা গেলেও এই জিনগুলোকে সহজেই আক্রমণ করে মাইকের কার্যকারিতা বিনষ্ট করা সম্ভব।” আর এই জিনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী জিনের নাম এসএই২। এই জিনের অনুপস্থিতি ক্যান্সার কোষগুলোর বৃদ্ধি হ্রাস করে,কারণ এর জন্য মাইটোসিস বিভাজনে স্পিন্ডল যন্ত্রের গঠন সম্পূর্ণ হতে পারে না।  এই স্পিন্ডল যন্ত্রই মাইটোসিস বিভাজনে সহায়তা করে।অসম্পূর্ণ গঠনের কারণে ক্যান্সার কোষগুলো সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারে না,যার ফলে কান্সার কোষগুলো মারা যায়। গবেষকরা প্রথমে স্তন কোষ ও পরে ইদুরের কোষে এসএই২ জিনের উপস্থিতি লক্ষ্য করেন। অতঃপর স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত ১৩০০ রোগীকে এসই২ এর পরিমাণের ভিত্তিতে দুইটি দলে ভাগ করে পর্যবেক্ষণ করেন।দেখা গেল অধিক এসএই২ বহনকারী রোগীদের মৃত্যুহার অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি । তবে কম সক্রিয় মাইকের ক্ষেত্রে এসএই২ এর উপস্থিতি তেমন প্রভাব ফেলে না। বিজ্ঞানীরা এটাও স্বীকার করেছেন যে এসই২ এর অনুপস্থিতি মানবদেহের বৃদ্ধি হ্রাস করে।
    
     তাই বলা যায়,এসই২ এবং অনুরূপ এনজাইমের নিষ্ক্রিয়করণের মাধ্যমে মাইক নির্ভর ক্যান্সারের নিরাময় সম্ভব। Elledge বলেন,কোন কোন প্রোটিনগুলোর উপর মাইক নির্ভর করে তা আমাদের আরো ভালোভাবে জানতে হবে। তবেই আমরা ক্যান্সার চিকিৎসায় নতুন দিগন্তের উন্মোচন করতে পারব।

1 টি মন্তব্য: